আমার স্বপ্নের হাতে হাতকড়া তাই স্বপ্নের হাতে বন্দী...

আমার স্বপ্নের হাতে হাতকড়া
তাই স্বপ্নের হাতে বন্দী
আমার মনের জমিতে জল নেই
তাই তোমার সাথে সন্ধি

রাধা...গো রাধা ....................
শ্যামপুরে যাই তোমার বিহনে...

যমুনার ঘাট একা একা আজ
শ্যামের বাশির সুর
মধ্যরাতে ঘুম পালালে রাধা কতদুর
রাধা..গো ........রাধা

স্বপ্নে তার সাথে হয় দেখা বসে বসে ভাবি......হাবিব ওয়াহিদ

  স্বপ্নে তার সাথে হয় দেখা ...
বসে বসে ভাবি
তা একা একা


সে স্বপ্নে আসে তবুও
স্বপ্নের চেয়েও মধুর
তাকে পাবার আসায়...
দুর বহুদুর.........

তার স্বপ্ন দেখে রাত চলে যায় 
তারপর আসে ভোর
 তারপর আমার ঘুম ভাঙ্গে
দেখি ব্যস্ততার  শহর 

অবিরাম ছুটে চলা 
একা একা কথা বলা
 কতো কিছু বলে ফেলা
তাকে ভালোবেসে ফেলা
       এ ভালোবাসাতেই রুদ্দুর.....

তার স্বপ্ন আধারে ঘেরা নয়
 সোনালী রোদে ভরা 
মেঘের আকাশ চাইনা 
তার স্বপ্নে আছে তারা 
ভেসেছি ভালো তাকে 
স্বপ্ন দেখার ফাকে
স্বপ্নের রং মেখে 
 মনেতে তার ছবি একে
সে স্বপ্নের চেয়েও মধু

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না

কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে
 তোমারে দেখিতে দেয় না
মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয়না

মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেন পাই না




ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে
 তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ‘হারাই হারাই’ সদা ভয় হয়
 হারাইয়া ফেলি চকিতে।
 আশ না মিটিতে হারাইয়া– পলক না পড়িতে হারাইয়া–
হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে

ওহে কী করিলে বলো পাইব তোমারে
 রাখিব আঁখিতে আঁখিতে– 
ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাবনা 
 তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
 আমার সাধ্য কিবা তোমারে–
দয়া না করিলে কে পারে–
তুমি আপনি না এলে 
কে পারে হৃদয়ে রাখিতে

আর-কারো পানে চাহিব না আর
করিব হে আমি প্রাণপণ–
ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব
 বিষয় -বাসনা বিসর্জন
 দিব শ্রীচরণে বিষয়– 
 দিব অকাতরে বিষয়–
দিব তোমার লাগি বিষয় -
বাসনা বিসর্জন

হাসিমুখ .....[শিরোনামহীন]

প্রতিটি রাস্তায় প্রতিটি জানালায়
হাসিমুখ, হাসিমুখে আনন্দধারা।
তুমি চেয়ে আছ তাই, আমি পথে হেটে যাই,
হেটে হেটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই।

রোদ উঠে গেছে তোমাদের নগরীতে
আলো এসে থেমে গেছে তোমাদের জানালায়,
আনন্দ হাসিমুখ, চেনা চেনা সবখানে
এরই মাঝে চল মোরা হারিয়ে যাই।
তুমি চেয়ে আছ তাই, আমি পথে হেটে যাই,
হেটে হেটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই।

হারিয়ে যেতে চাই, তোমাদের রাস্তায়,
হারিয়ে যেতে চাই, তোমাদের রাস্তায়,
অনেক অজানা ভীড়ে স্বচ্ছ নিরবতায়,
রোদ উঠে, গেছে চেনা এই নগরীতে নাগরিক জানালা
হাসিমুখে একাকার।
আনন্দ উৎসব চেনাচেনা সবখানে,
এরই মাঝে আমাদের ছুটে যাওয়া দরকার।
তুমি চেয়ে আছ তাই, আমি পথে হেটে যাই,
হেটে হেটে বহুদূর, বহুদূর যেতে চাই।

আমার গায়ে যত দুঃখ সয়...বন্ধুয়া রে করো তোমার মনে যাহা লয়

আমার গায়ে যত দুঃখ সয়
বন্ধুয়া রে করো তোমার মনে যাহা লয়

নিঠুর বন্ধু রে, বলেছিলে আমার হবে
মন দিয়াছি এই ভেবে
সাক্ষী কেউ ছিলনা সেসময়
সাক্ষী শুধু চন্দ্র-তারা
একদিন তুমি পড়বে ধরা রে বন্ধু
ত্রিভুবনের বিচার যেদিন হয়

নিঠুর বন্ধু রে, দুঃখ দিয়া হিয়ার ভিতর
একদিনও না লইলে খবর
এইকি তোমার প্রেমের পরিচয় ও বন্ধুরে
কি জানি কি আশা দিয়া
কেন বা প্রেম শিখাইলা রে বন্ধু
দূরে থাকা উচিত কি আর হয়

আসান বন্ধুরে, নিঠুর বন্ধুরে, বিচ্ছেদের বাজারে গিয়া
তোমার প্রেম বিকি দিয়া
করব না প্রেম আর যদি কেউ কয় ও বন্ধুরে

উকিলের হয়েছে জানা
কেবলই সুরের কারখানা রে বন্ধু
চোরে চোরে দেওয়ায় আলা হয়

মানুষ ধর মানুষ ভজ শোন বলি রে পাগল মন.......

মানুষ ধর মানুষ ভজ
শোন বলি রে পাগল মন
মানুষের ভিতরে মানুষ
করিতেছে বিরাজন

মানুষ কি আর এমনি বটে
যার চরণে জগত লুটে
এই না পঞ্চ ভূতের ঘটে
খেলিতেছে নিরাঞ্জন

চৌদ্দ তালার উপরে দালান
তার ভিতরে ফুলের বাগান
লাইলী আর মজনু দেওয়ান
সুখেই করে যে আসন

দুই ধারে দুই কঠোরান
হায়াত মোর মাইঝখানে
সময় থাকতে খুঁজতে পরান
নিকটেতে তাল সমন।ৱ

সোনার পুরী আন্ধার করে
যেদিন পাখি যাবে উড়ে
শূণ্য খাঁচা থাকবে পড়ে
কে করবে আর কার যতন

কালাসে খালাশ মেলে
তালাস করে রঙমহলে
উঠিয়া হাবলঙের কূলে
চেয়ে থাকব সর্বক্ষণ

দেখিবে হাবলঙের কূলে
দুইদিকেতে অগ্নি জ্বলে
বেভেরসি দত্তিন বলে
চমকিছে স্বর্ণের মতন

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম ..[বাউল শাহ আবদুল করিম]

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম 

হিন্দু বাড়িতে যাত্রা গান হইত
নিমন্ত্রণ দিত আমরা যাইতাম
জারি গান, বাউল গান
আনন্দের তুফান
গাইয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম

বর্ষা যখন হইত,
গাজির গান আইত,
রংগে ঢংগে গাইত
আনন্দ পাইতাম
কে হবে মেম্বার,
কে বা সরকার
আমরা কি তার খবরও লইতাম
হায়রে আমরা কি তার খবরও লইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

করি যে ভাবনা
সেই দিন আর পাব নাহ
ছিল বাসনা সুখি হইতাম
দিন হইতে দিন
আসে যে কঠিন
করিম দীনহীন কোন পথে যাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম

সোনার ময়না পাখি........

আমার সোনার ময়না পাখি
কোন দেশেতে গেলা উইড়া রে
দিয়া মোরে ফাঁকি রে।।

সোনা বরণ পাখিরে আমার
কাজল বরণ আঁখি
দিবানিশি মন চায় রে
বাইন্ধা তোরে রাখি রে।।

দেহ দিছি প্রাণরে দিছি
আর নাই কিছু বাকি
শত ফুলের বাসন দিয়া রে
অঙ্গে দিছি মাখি রে।।

যাইবা যদি নিঠুর পাখি
ভাসাইয়া মোর আঁখি
এ জীবন যাবার কালেরে
ও পাখিরে
একবার যেন দেখিরে।।

এখন অনেক রাত....[আইয়ুব বাচ্চু]

এখন অনেক রাত
খোলা আকাশের নীচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আমায় ডেকেছে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে।।

আবেগী এমন রাতে
ভুল করে এই পথে
এসে যদি ফিরে যাও
আমায় না পেয়ে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে।।

চলে যাওয়া সেই পথে
ঝিরিঝিরি বাতাসে
আমার এই মন কাঁদে
তোমায় না পেয়ে
তাই আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে।।

আচ্ছা কেন মানুষগুলো.......[রেনেসা]

আচ্ছা কেন মানুষগুলো এমন হয়ে যায়
চেনাজানা মুখগুলো সব কেমন হয়ে যায়

দিন বদলের খেলাতে
মন বদলের মেলাতে
মানুষগুলো দিনে দিনে
বদলে কেন যায়।।

সুখের দিনে ভালোবাসা দেয় যে কতজন
কাছে আসে ভালোবাসে দেয় যে ভরে মন
দিন বদলের খেলাতে
মন বদলের মেলাতে
মানুষগুলো দিনে দিনে
বদলে কেন যায়।।

দুঃখের দিনে কাছে এসে পথ ভুলে কি কেউ
একা ঘরে পড়েই রবে জানবে নাতো কেউ
দিন বদলের খেলাতে
মন বদলের মেলাতে
মানুষগুলো দিনে দিনে
বদলে কেন যায়।।

গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না....[দলছুট]

গাড়ি চলে না চলে না
চলে না রে, গাড়ি চলে না।

চড়িয়া মানব গাড়ি
যাইতেছিলাম বন্ধুর বাড়ি
মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি
উপায়-বুদ্ধি মেলে না।।

মহাজনে যতন করে
তেল দিয়াছে টাংকি ভরে
গাড়ি চালায় মন ড্রাইভারে
ভালো-মন্দ বোঝে না।।

ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে
পার্টসগুলো ক্ষয় হয়েছে
ডাইনামো বিকল হয়েছে
হেডলাইট দুইটা জ্বলে না।।

ইঞ্জিনে ব্যতিক্রম করে
কন্ডিশন ভালো নয় রে
কখন জানি ব্রেক ফেল করে
ঘটায় কোন্‌ দুর্ঘটনা।।
আবুল করিম ভাবছে এইবার
কোন দিন গাড়ি কি করবে আর
সামনে বিষম অন্ধকার
করতেছে তাই ভাবনা।।

আমি ফিরে পেতে চাই সেই বৃষ্টি ভেজা সুর [দলছুট]

আমি ফিরে পেতে চাই সেই বৃষ্টি ভেজা সুর
আমি ফিরে পেতে চাই সাত সুখের সমুদ্দুর
শুধু একটি বার একটি বার তুমি বৃষ্টি ঝরাও ফিরে চাও
শুধু একটি বার একটি বার তুমি স্বপ্ন ওড়াও ফিরে চাও
আমার সুরের সাথে তোমার সুর মেলাও ।।

তীর হারা এই দুঃসময় স্বপ্ন ডাক দেয়
হাতছানিতে যায় হারিয়ে আধার অচেনায়
আমার গানের সাথে তোমার গান মেলাও ।।

কোন গভীরে ডুবেছিলে কোন সে মোহনায়
যায় সীমানা যায় পেরিয়ে তোমার আঙ্গিনায়
চোখের পলক চোখে কুনঠি একাকার ।।

আমি ফিরে পেতে চাই সেই বৃষ্টি ভেজা সুর
আমি ফিরে পেতে চাই সাত সুখের সমুদ্দুর
শুধু একটি বার একটি বার তুমি বৃষ্টি ঝরাও ফিরে চাও
শুধু একটি বার একটি বার তুমি স্বপ্ন ওড়াও ফিরে চাও
আমার সুরের সাথে তোমার সুর মেলাও ।।

আমি তোমাকেই বলে দেবো, কি যে একা দীর্ঘ রাত....

আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত.........
আমি হেটে গেছি বিরান এ পথে........

আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প......
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়.....
ছুয়ে কান্নার রং, ছুয়ে জোছনার ছায়া.......

আমি কাউকে বলিনি, সে নাম..........
কেউ জানেনা, না জানে আড়াল.......
জানে কান্নার রং, জানে জোছনার ছায়া.......

তবে এই হোক তীরে জাগুক প্লাবন.......
দিন হোক লাবণ্য হৃদয়ের শ্রাবন.......
তুমি কান্নার রং, তুমি জোছনার ছায়া.......

আমি তোমাকেই বলে দেব, কি যে একা দীর্ঘ রাত.....
আমি হেটে গেছি, বিরান এ পথে......
আমি তোমাকেই বলে দেব, সেই ভুলে ভরা গল্প.....
কড়া নেড়ে গেছি, ভুল দরজায়........
ছুয়ে কান্নার রং, ছুয়ে জোছনার ছায়া.....

শুধু তোমার বাণী নয় গো

শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়,
মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো॥

সারা পথের ক্লান্তি আমার সারা দিনের তৃষা
কেমন করে মেটাব যে খুঁজে না পাই দিশা—
এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায় সেই কথা বলিয়ো॥

হৃদয় আমার চায় যে দিতে, কেবল নিতে নয়,
বয়ে বয়ে বেড়ায় সে তার যা-কিছু সঞ্চয়।
হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো, দাও গো আমার হাতে—
ধরব তারে, ভরব তারে, রাখব তারে সাথে,
একলা পথের চলা আমার করব রমণীয়

তুমি কি কেবলই ছবি

তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা।
ওই-যে সুদূর নীহারিকা
যারা করে আছে ভিড় আকাশের নীড়,
ওই যারা দিনরাত্রি
আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী গ্রহ তারা রবি,
তুমি কি তাদের মত সত্য নও।
হায় ছবি, তুমি শুধু ছবি।।
নয়নসমুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই– আজি তাই
শ্যামলে শ্যামল তুমি, নীলিমায় নীল।
আমার নিখিল তোমাতে পেয়েছে তার অন্তরের মিল।
নাহি জানি, কেহ নাহি জানে–
তব সুর বাজে মোর গানে,
কবির অন্তরে তুমি কবি–
নও ছবি, নও ছবি, নও শুধু ছবি।

যেতে যেতে একলা পথে

যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি।
ঝড় এসেছে ওরে ওরে, ঝড় এসেছে ওরে এবার
ঝড়কে পেলেম সাথি॥

আকাশকোণে সর্বনেশে ক্ষণে ক্ষণে উঠছে হেসে
প্রলয় আমার কেশে বেশে করছে মাতামাতি॥

যে পথ দিয়ে যেতেছিলেম ভুলিয়ে দিল তারে
আবার কোথা চলতে হবে গভীর অন্ধকারে।
বুঝি বা এই বজ্ররবে নূতন পথের বার্তা কবে—
কোন্ পুরীতে গিয়ে তবে প্রভাত হবে রাতি

পুরানো সেই দিনের কথা

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর-একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।

মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়–
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি বকুলের তলায়।
হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়–
আবার দেখা যদি হল, সখা, প্রাণের মাঝে আয়

সকাতরে ওই কাদিছে

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়, না মানে সান্ত্বনা।।
সুখ-আশে দিশে দিশে বেড়ায় কাতরে–
মরীচিকা ধরিতে চায় এ মরুপ্রান্তরে।।
ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা, সন্ধ্যা হয়ে আসে–
কাঁদে তখন আকুল-মন, কাঁপে তরাসে।।
কী হবে গতি, বিশ্বপতি, শান্তি কোথা আছে–
তোমারে দাও, আশা পূরাও, তুমি এসো কাছে।। ।

শাওনগগণে ঘোর ঘনগাটা......

শাওনগগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথযামিনী রে।
কুঞ্জপথে, সখি, কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।

উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।
দমকত বিদ্যুত, পথতরু লুন্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ
ঘন ঘন রিমঝিম, রিমঝিম রিমঝিম, বরখত নীরদপুঞ্জ।
শাল-পিয়ালে তাল-তমালে নিবিড়তিমিরময় কুঞ্জ।

কহ রে সজনী, এ দুরুযোগে কুঞ্জে নিরদয় কান
দারুণ বাঁশী কাহে বজায়ত সকরুণ রাধা নাম।
মোতিম হারে বেশ বনা দে, সীঁথি লগা দে ভালে।

উরহি বিলুন্ঠিত লোল চিকুর মম বাঁধহ চম্পকমালে।
গহন রয়নমে ন যাও, বালা, নওলকিশোরক পাশ।
গরজে ঘন ঘন, বহু ডর পাওব, কহে ভানু তব দাস

গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ.....

গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে।

ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে
মরি হায় হায় রে

ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে; যায় রে কোন্ চুলায় রে।
ও যে কোন্ বাঁকে কী ধন দেখাবে, কোন্খানে কী দায় ঠেকাবে–
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে ভেবেই না কুলায় রে

আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো

আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো
আমায় পড়বে মনে, কাছে দূরে যেখানেই থাকো


হাওয়ার গল্প আর পাখিদের গান শুনে শুনে
আজ এই ফাল্গুনে দুটি চোখে স্বপ্ন শুধু আঁকো
(আজ এই দিনটাকে.............)


এসো আজ সারাদিন বসে নয় থাকি পাশাপাশি
আজ শুধু ভালোবাসাবাসি
শুধু গান আর হাসাহাসি


রঙের বর্ষা ঐ নেমেছে যে দেখো ফুলে ফুলে
দুটি হাত তুলে আমাকে আরো কাছে ডাকো
(আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো)

বৃদ্ধাশ্রম

ছেলে আমার মস্ত মানুষ,মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার ওপার।
নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামী দামী
সবচেয়ে কম দামী ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

আমার ব্যবহারের সেই আলমারি আর আয়না
ওসব নাকি বেশ পুরনো,ফ্ল্যাটে রাখা যায় না।
ওর বাবার ছবি,ঘড়ি-ছড়ি,বিদেয় হলো তাড়াতাড়ি
ছেড়ে দিলো, কাকে খেলো, পোষা বুড়ো ময়না।
স্বামী-স্ত্রী আর আ্যালসেশিয়ান-জায়গা বড়ই কম
আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম!

নিজের হাতে ভাত খেতে পারতো নাকো খোকা
বলতাম আমি না থাকলে কি করবি রে বোকা?
ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো খোকা আমার কথা শুনে-
খোকা বোধ হয় আর কাঁদে না,নেই বুঝি আর মনে।
ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠতো খোকা কেঁদে
দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম বেঁধে
দু’হাত আজো খুঁজে,ভুলে যায় যে একদম-
আমার ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম!

খোকারও হয়েছে ছেলে,দু’বছর হলো
তার তো মাত্র বয়স পঁচিশ,ঠাকুর মুখ তোলো।
একশো বছর বাঁচতে চাই এখন আমার সাধ
পঁচিশ বছর পরে খোকার হবে ঊনষাট।
আশ্রমের এই ঘরটা ছোট,জায়গা অনেক বেশি-
খোকা-আমি,দু’জনেতে থাকবো পাশাপাশি।
সেই দিনটার স্বপ্ন দেখি ভীষণ রকম
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!
মুখোমুখি আমি,খোকা আর বৃদ্ধাশ্রম!

আমি তোমাকেই বলে দেব

আমি তোমাকেই বলে দেব
কী যে একা দীর্ঘ রাত
আমি হেটে গেছি বিরান পথে
আমি তোমাকেই বলে দেব
সেই ভুলে ভরা গল্প
কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরোজায়-
ছুয়ে কান্নার রঙ
ছুয়ে জোছনার ছায়া

আমি কাউকে বলিনি সে নাম
কেউ জানেনা, না জানে আড়াল
জানে কান্নার রঙ
জানে জোছনার ছায়া

তবে এই হোক, তীরে জাগুক প্লাবন
দিন হোক লাবন্য, হ্রদয়ে শ্রাবন
তুমি কান্নার রঙ
তুমি জোছনার ছায়া

তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়

তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়
বুকের দহনে করুণ রোদনে তীলে তীলে তার ক্ষয়
তীলে তীলে তার ক্ষয়

আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে যায়
শুকনো পাতার মরমরে বাজে কত সুর বেদনায়
আকাশে বাতাসে নিষ্ফল আশা হাহাকার হয়ে রয়

প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা বয়ে
জীবন খাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে
কেউ তো জানেনা প্রাণের আকুতি বারে বারে কেন যায়
স্বার্থের টানে প্রিয়জন কেন দূরে সরে চলে যায়
ধরনীর বুকে পাশাপাশি তবু কেউ বুঝি কারো নয়

[শিল্পী : আব্দুল জব্বার]